
দিব্যেন্দু গোস্বামী
বারাসাত, পশ্চিমবঙ্গ।
সম্পত্তির লোভ, ভাড়াটে খুনির সঙ্গে হাত মিলিয়ে মা-বাবাকে খুন মেয়ে জামাইয়ের, শাস্তি যাবজ্জীবন কারাদণ্ড। উত্তর ২৪ পরগণায় হাবড়ার টুনিঘাটা লন্ডনপাড়া এলাকা, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২০। রাত তখন অনেক। নিজেদের বাড়িতে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে আছেন প্রাক্তন সেনাকর্মী রামকৃষ্ণ মণ্ডল এবং স্ত্রী লীলারানী। বাড়ির ভেতরে ভেসে যাচ্ছে রক্তের বন্যা। একেবারে কাছ থেকে অর্থাৎ ‘পয়েন্ট ব্ল্যাঙ্ক রেঞ্জ’-এ গুলি করা হয়েছে দুজনকেই। হাবড়া থানায় ১৬ সেপ্টেম্বর অভিযোগ দায়ের করেন রামকৃষ্ণের ভাই জ্যোতির্ময় মণ্ডল। অভিযোগের বক্তব্য খুব স্পষ্ট: তাঁর দাদা-বৌদির হত্যাকারীদের খুঁজতে বেশিদূর যেতে হবে না, মেয়ে-জামাই পর্যন্ত গেলেই হবে। তদন্তে নেমে অভিযোগের ভিত্তিতে মৃত দম্পতির মেয়ে নিবেদিতা সাধু এবং জামাই বান্টি সাধুকে গ্রেফতার করেন সাব-ইনসপেক্টর রামকৃষ্ণ গুরিয়া। সঙ্গে এক তৃতীয় ব্যক্তি — ভাড়াটে খুনি তথা ‘শার্পশুটার’ অজয় দাস।এই অকল্পনীয় অপরাধের উৎস? জেরার প্রকাশ পায়, বাজারে বান্টির দেনার পরিমাণ ছিল প্রায় ১০ লক্ষ টাকা। পাওনাদারদের তাগাদা সহ্য করতে না পেরে শ্বশুর-শাশুড়ির কাছে টাকা চেয়েছিল বান্টি। বলা বাহুল্য, টাকা মেলেনি। এবং সেই রাগেই স্ত্রীর সঙ্গে মিলে অজয়ের সাহায্যে ঠাণ্ডা মাথায় খুন।
অপরাধী দ্রুত ধরা পড়লেও অপরাধ প্রমাণ করার অতি পরিশ্রমসাধ্য কাজটি সযত্নে সম্পন্ন করেন রামকৃষ্ণ। চার্জশিটে ধরা থাকে বিশেষজ্ঞদের মতামত এবং ফরেনসিক তথ্য সমেত গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণসমূহ। মামলা চলাকালীন প্রমাণ হিসেবে আরও দাখিল হয় একটি কল রেকর্ডিং — অজয়কে যখন সুপারি দেওয়া হচ্ছিল, ফোনে সেই কথোপকথন রেকর্ড করে রাখে অজয়। যা পরে উদ্ধার করে পুলিশ।পাবলিক প্রসিকিউটর বিভাস চ্যাটার্জির সহায়তায় চার বছরের বিচারপর্ব শেষে মামলার রায় বেরিয়েছে সম্প্রতি। নিবেদিতা, বান্টি, এবং অজয়কে যাবজ্জীবন কারাবাসের সাজা শুনিয়েছেন বারাসত আদালত, পাশাপাশি আর্থিক জরিমানা। অজয়ের কাছে আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার হওয়ায় অস্ত্র আইনের অধীনে আরও তিন বছরের কারাবাসের সাজা হয়েছে তার। সঙ্গে পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা